Header Ads Widget

Responsive Advertisement

এক বেঁচে ফেরার গল্প

তা'মীরুল মিল্লাত টঙ্গী শাখার আলিম'১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী,
কিছুদিন আগের কথা। আমি তখন থার্ড ইয়ারে, মেডিসিন ওয়ার্ডের ক্লাস শুরু হয়েছে। খবর পেলাম, ছাত্রলীগের নেতারা আমাকে খুঁজছে। কারণ হতে পারে, আমি পবিত্র কুরআনের হাফেজ, মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা, এবং সুন্নতী দাঁড়ি-টুপি রাখা। এই কারণে তারা আমাকে টার্গেট করেছিল।
ভয়ে ক্লাসে নিয়মিত যেতাম না, কিন্তু মেডিসিন ওয়ার্ডের এটেন্ডেন্স লাগে। তাই বাধ্য হয়ে ঐদিন ওয়ার্ডে গেলাম। সকাল ১০টার ওয়ার্ড শেষ হলো ১১:৪৫-এ। তখন কিছু ব্যাচমেট—সুদিপ্ত, শাহীন, ফিরোজ—আমাকে বলল, "ছাত্রলীগ থেকে তোমাকে হলে ডেকেছে। যেতে হবে।"
আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কোনো বন্ধু পাশে ছিল না। নিজেকে বাঁচাতে রোগীর ফাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম, কিন্তু কিছুক্ষণ পর তারা এসে আমাকে হলের দিকে টেনে নিয়ে গেলো, যেন আমি একজন অপরাধী!
হল টিভি রুমে নিয়ে যাওয়া হলো আমাকে। দুপুর ১২টা পেরিয়ে গেছে। ছাত্রলীগের ব্যাচমেটরা আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে, ৮/১০ জন। ওদের চোখের দৃষ্টি আমাকে অপরিচিত আর একাকী করে তুলেছিলো। অথচ ওরা আমারই বন্ধু ছিলো!
ইতোমধ্যে যোহরের আজান হলো। আমি নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে চাইলাম, কিন্তু তারা যেতে দিলো না। দুপুর ২:২০ এর দিকে ২৮তম ব্যাচের ছাত্রলীগের ক্যাডাররা এলো। আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করেই তারা বললো, "তুই শিবির করিস। আমরা জানি। দাঁড়ি-টুপি শিবিরের লোকদের থাকে!" তারা আরও বলল, "তোকে আমরা শিবিরের ভাইয়ের সাথে দেখেছি।"
আমি ৬ মাস আগে এক ভাইয়ের বিয়েতে গিয়েছিলাম, সেই ভাইয়ের সাথে দেখা হলে কথা বলেছিলাম, কিন্তু জানতাম না সে শিবির করে। তাদের কথায় ফোন দিলাম, কিন্তু তাতেও তারা বিশ্বাস করেনি। এরপর শুরু হলো ধমকানো, চড় থাপ্পড়, এবং অকথ্য গালিগালাজ! ফারহান আমার কানে অনেক থাপ্পড় আর লাথি মারতে থাকে। দিদার নামে একজন এলো, সে আমাকে এলোপাতাড়ি থাপ্পড় মারতে থাকলো।
ওরা সেই ভাইকে ফোন দিয়ে হলে আসতে বললো। আমি বললাম ভাই ঢাকায় আছেন, কিন্তু ওরা বুঝতে পারলো না। মাগরিবের আজান হওয়ার পর তারা আমাকে নিয়ে গেলো ছাত্রলীগের কুখ্যাত "টর্চার সেলে!" সেখানে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জাকির বসা ছিলো।
ওরা আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে এবং প্রতিবার উত্তর না দিতে পারলে মারতে থাকে। বিশেষ করে সাজেদুর জয় আমার উপর অনেক বেশি নির্যাতন করেছিল। তারা আমার ফোন চেক করে কিছু না পেয়ে, আজগুবি অভিযোগ তুলে মেরে ফেলে। আমার কান এতটাই আঘাতপ্রাপ্ত হলো যে, গাড়ির হর্ন শুনলেও ব্যাথা করতো।
রাত ১০টার দিকে আমাকে রুমের বাইরে নিয়ে গেলো। পুরো হলের ছাত্ররা টিভি রুমে লাইন করে দাঁড়ানো। আমাকে মারতে মারতে প্রতিটা লাইনে নিয়ে গিয়ে বলছিলো, "বল, কাকে চিনিস এখানে, কে কে শিবির করে বা তোদের এজেন্ট কে?"
২৫তম ব্যাচের পিয়াস তখন একটি গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে প্রচণ্ড মারতে শুরু করলো। তাদের কাছে হাত-পা ধরলেও, তারা আমাকে মারতে থামেনি। সভাপতি নাসিম আর সাধারণ সম্পাদক জাকির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই নির্যাতন দেখতে ছিলো!
রাত ১২টা পর্যন্ত তারা আমাকে মেরেছে। ভাবছিলাম, টানা ১০ ঘণ্টা নির্যাতন সহ্য করেও আমি বেঁচে আছি কীভাবে! তারপর তারা আমাকে দিয়ে লিখালো, "আমি নিষিদ্ধ ঘোষিত, সরকার বিরোধী জঙ্গি দলের সাথে যুক্ত।" এবং সেই লেখা পড়িয়ে ক্যামেরায় রেকর্ড করে নেয়। তারা বললো, "আজকের ঘটনা যদি জানাজানি করিস, তাহলে ছাত্রত্ব বাতিল করবে।"
এই ভয় নিয়ে আমি এতদিন চুপ ছিলাম। আজ আল্লাহ পাক সুযোগ করে দিলেন তাদের জুলুমের কথা প্রকাশ করার, আলহামদুলিল্লাহ! আমি চাই, যারা আমাকে নির্যাতন করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। আর কোনো শিক্ষার্থী যেন তার ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য নির্যাতিত না হয়। প্রশাসনকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে এমন "টর্চার সেল" আর না চলে।
হাফেজ মো: শামীমুল ইসলাম
২৯তম ব্যাচ, দিমেক
আলিম-১৯

                                আহতের মর্মান্তিক কিছু দৃশ্য




image1



image2

Post a Comment

0 Comments